বৃহস্পতিবার, সকাল ৮:০৯
১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি,

শাপলা চত্বরে শহীদদের খসড়া তালিকা প্রকাশ

১২ বছর আগে রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৯৩ জন শহীদের তথ্য প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। একে প্রাথমিক খসড়া তালিকা দাবি করে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (৪ মে) হেফাজতে ইসলামের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেফায়েতুল্লাহ আজহারীও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এই ৯৩ জনের তালিকা প্রাথমিক তথ্য। কাজ চলছে, এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তেরো দফা দাবি আদায়ে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে কর্মসূচি দিয়েছিল কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সেসময় হেফাজতে ইসলামের আমির ছিলেন আল্লামা শাহ আহমেদ শফি। তার নেতৃত্বে কয়েকজন ব্লগারের ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও নারী নীতির বিরোধিতা করে ১৩ দফা দাবি জানিয়েছিলেন তারা। এই দাবিতেই এই শাপলা চত্বরের কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি। সেদিন দেশের কওমি ঘরানার কয়েক হাজার আলেম, ছাত্র ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সারাদিন নানান ঘটনার পর রাতেও অবস্থান নেন তারা। পরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি তাদের সরাতে অভিযানে নামে। রাত ৩টার দিকে চারদিক থেকে শুরু হওয়া মুহুর্মুহু গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেলে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয় এলাকাজুড়ে। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালান।
ওই রাতের অভিযানে হেফাজতের অনেক কর্মী হতাহত হন। হেফাজতের খসড়া রিপোর্টে শাপলা চত্বরে গুলিতে ৯৩ শহীদের নাম প্রকাশ পেয়েছে। তালিকায় নিহতদের নাম-পরিচয়, পরিবারের সদস্যদের নামসহ প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, শহীদ হওয়া দুই তৃতীয়াংশই ছিলেন যুবক।
তবে এ ঘটনায় বেসরকারিভাবে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অধিকার ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট তাদের ফেসবুকে ৬১ জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে। এছাড়া গত ২ মে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, ওই ঘটনায় কতজন নিহত হয়েছিলেন, তা নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব বিভ্রান্ত, তখন তিনি এবং মার্ক ডামেট (তৎকালীন বিবিসি ঢাকা প্রতিনিধি) মিলে দুই সপ্তাহ ধরে মাঠে কাজ করেন। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৫ ও ৬ মে’র সহিংসতায় অন্তত ৫৮ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে সাতজন ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনেও শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিষয় উঠে এসেছে।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচলিত ছিল সেদিন রাতের আঁধারে হাজারের বেশি নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশ বলেছিল, অভিযানের সময় আহত একজন পরে হাসপাতালে মারা যান। আর দিনের সহিংসতায় নিহত চারজনের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল মঞ্চের কাছে একটি ভ্যানে। তবে ৫ মে দিনের সহিংসতা এবং পর দিন ৬ মে সারা দেশে সহিংসতায় ২৮ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *