বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী নিধন থামছেই না। একই সাথে চোরা শিকারিদের কুনজর মাছের পোনার দিকেও। ফলে সুন্দরবনের হরিণ এবং মাছের পোনা বা রেনু অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিককালে শিকারীচক্রের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুনে। যার ফলে সুন্দরবনের হরিণগুলো দিন দিন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। গত দুই মাসে বনবিভাগ, পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের যৌথ অভিযানে ২৭৪ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে ৩০ কেজি পারশে মাছের পোনাও জব্দ করা হয়। যার পুরোটাই ছিল মৃত।
সুন্দরবনে বন্য হরিণ প্রধানত শিকারী ও পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। বনদস্যুদের তৎপরতার পাশাপাশি হরিণ শিকারীচক্রও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ১৫ জানুয়ারী সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা সত্যপীরের ভারানী খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে একটি নৌকা এবং হরিণ ধরার সরঞ্জামও জব্দ করা হয়, তবে শিকারীদের কাউকে আটক করা যায়নি। ৩ জানুয়ারী পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩৪ কেজি হরিণের মাংসসহ ইকবাল মোড়ল নামে এক শিকারীকে আটক করেছে।
২০ ফেব্রুয়ারী খাসিটানা বন টহলফাড়ির বনরক্ষীরা ৯০ কেজি হরিণের মাংস, একটি নৌকা এবং হরিণ ধরার সরঞ্জাম উদ্ধার করে। ২২ জানুয়ারী বনবিভাগ ও কোস্টগার্ড দক্ষিণবেদকাশি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদ থেকে ৬২ কেজি হরিণের মাংস ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে। ৬ মার্চ পুলিশ আমাদী ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে প্রভাষ মন্ডল ও অসিত সানাকে ৮ কেজি হরিণের মাংসসহ গ্রেফতার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বনের মধ্যে মাঝে মাঝে শুকরের চামড়াও পাওয়া যাচ্ছে, যা সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হরিণের মাংস বিক্রেতারা শুকরের মাংস দিয়ে প্রতারণা করছেন। একদিকে যেমন বন্য প্রাণী হত্যা হচ্ছে, অন্যদিকে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় জেলে ও বাওয়ালীরা অভিযোগ করেছেন যে, বনবিভাগের টহল থাকা সত্ত্বেও শিকারীচক্র তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে। অনেকসময় কিছু অসাধু বনকর্মী শিকারীদের সহায়তা করে এবং তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণ শিকার হয়। বিশেষ করে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের কোবাদক, কাশিয়াবাদ ও বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের এলাকায় শিকারীচক্র অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে।