পহেলা বৈশাখের বিকেল। গ্রামীণ পথে সেমাই খেতে রঙিন জামা পরে দাদির বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছিল মাদ্রাসা পড়ুয়া ছোট্ট মেয়েটি। বাবার দেশ, দাদির বাড়ি—এই দুইয়ের টানেই সে প্রায়ই যেত পাশের গ্রামে। দাদির কোলে গল্প, সন্ধ্যার আলোয় খেলা, আর ঘরের এক কোনে ঘুমিয়ে পড়া—এসবই ছিল তার আপন পৃথিবী। সেদিনও ঠিক তেমনভাবেই গিয়েছিল সে। কিন্তু এবারের যাওয়াই ছিল শেষ যাওয়া, ফিরে আসেনি আর।
পরদিন সকালে মা যখন মেয়েকে আনতে গেলেন, দাদি জানালেন সে আগেই চলে গেছে। অথচ মেয়েটি আর কখনো ফিরেনি নিজের ঘরে। শুরু হলো আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার তীব্র সন্ধান। একসময় গ্রামের ভুট্টা খেতের মাঝে পাওয়া গেল তার নিথর দেহ। মুখ ঝলসানো, শরীর নিস্তেজ—প্রকৃতির সব সৌন্দর্য যেন মুহূর্তে বিবর্ণ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগেও যে মেয়েটি সেমাইয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল, সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে নরপশুরা নির্মমভাবে ছিনিয়ে নিল তার জীবন।
পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, কিশোর দলের চার থেকে পাঁচজন শিশুটিকে পহেলা বৈশাখের দিন দাদির বাড়ি থেকে ফেরার পথে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। প্রথমে শ্বাসরোধ করেও ঘাড় মটকে হত্যা নিশ্চিত করে তারা। এরপর মুখে এসিড নিক্ষেপ করে মরদেহ ফেলে চলে যায়। তারপর বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মেতে ওঠে তারা।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার পাঁচজন জানায়, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আনন্দ-উল্লাসের পরিকল্পনা করেছিল সোহেলসহ চারজন। তারা নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা সংগ্রহ করে সেবন করে। ভুক্তভোগী শিশুটির বাড়ি নাটোর জেলার বড়াইগ্রামে হলেও ঘটনাটি ঘটেছে পাশের জেলা পাবনার চাটমোহরে। দুটি গ্রাম পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় চলাফেরা ছিল সহজ। শিশুটি স্থানীয় একটি ক্যাডেট মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা মালয়েশিয়ায় প্রবাসে কর্মরত।
মর্মান্তিক এ ঘটনার পর শিশুটির মা চাটমোহর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খাঁনের নির্দেশনায়, ওসি মনজুরুল আলমের নেতৃত্বে এসআই আওলাদ হোসাইনসহ তদন্তকারী দল তদন্ত শুরু করে।
রোববার (২০ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যৌথ অভিযানে অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সবাই শিশুটিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে চারজন কিশোর, যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তারা চাটমোহর ও বড়াইগ্রামের বাসিন্দা। অপর আসামি সোহেল রানার বয়স ২৫ বছর।
পুলিশ আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা পাঁচজনই স্বীকার করেছে। মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
ওসি মঞ্জুরুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারের পর রোববার অভিযুক্তদের পাবনার আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
-কা/ত/মা