তেরো দফা দাবি আদায়ে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে কর্মসূচি দিয়েছিল কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সে কর্মসূচি কেন্দ্র করে শাপলা চত্বর ও এর আশপাশের এলাকায় সংগঠনটির হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নিলে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং সহিংসতার রূপ নেয়। এক পর্যায়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে পল্টনসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে।
হেফাজতের কর্মসূচি কেন্দ্র করে ৫ মে রাতে রাজধানীর অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের শাপলা চত্বর ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক ভীতিকর পরিবেশ। শেষ পর্যন্ত পুলিশ, র্যাব ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির অভিযানে খালি করা হয়েছিল শাপলা চত্বর। সে দিন দায়িত্ব পালন করা সংবাদকর্মীদের বয়ানে উঠে এসেছে ভীতিকর সেই ঘটনার চিত্র। সেই ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্যসহ কমপক্ষে ৫৮ জন নিহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
অপরদিকে একটি মানবাধিকার সংগঠন শাপলা চত্বরে এ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন তথ্যানুসন্ধান করে এবং অন্ততপক্ষে ৬১ জন বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এ দাবি নাকচ করে দেয়। সে সময় পুলিশ বলেছিল, অভিযানের সময় আহত একজন পরে হাসপাতালে মারা যান। আর দিনের সহিংসতায় নিহত চারজনের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল মঞ্চের কাছে একটি ভ্যানে। তবে ৫ মে দিনের সহিংসতা এবং পর দিন ৬ মে সারা দেশে সহিংসতায় ২৮ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনেও শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিষয় উঠে এসেছে।
৫ মে’র ঘটনা স্মরণ করে গত ৩ মে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে সে দিনের অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘যখনই আমি হেফাজতে ইসলামকে কোনো বড় বিক্ষোভ করতে দেখি, তখনই আমার মনে পড়ে যায় শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের ওপর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন্য আমার অনুসন্ধানের। যখন গোটা বিশ্ব এই গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, তখন আমি ঢাকায় বিবিসির প্রাক্তন সংবাদদাতা মার্ক ডামেটের সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং কাজটি গ্রহণ করি।’
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার লিখেছেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, দুই দিনের সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্যসহ কমপক্ষে ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। আপনারা যারা এখন সাংবাদিকতার জগতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মানবাধিকার রক্ষা করছেন, তারা হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না যে, কাজটি কতটা কঠিন ছিল।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে চলা তদন্তের সময়, রাস্তাঘাট, হাসপাতালের লগবুক খুঁজে, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে, প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এবং কবরস্থানের প্রমাণ সংগ্রহ করে, মানুষকে খোলাখুলিভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে, আমি সবসময় নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে পড়ে যাওয়ার এবং নিখোঁজ হওয়ার ভয় বহন করতাম।’
সবশেষে লিখেছেন, ‘নিরাপত্তার কারণে, আমি আগে কখনো আমার কাজের কৃতিত্ব দাবি করতে পারতাম না, কিন্তু যখনই আমি দেখি যে কোনো সহকর্মী সাংবাদিক আমার কাজকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন, তখন তা আমাকে সত্যিই আনন্দ দেয়।’
এ ছাড়া রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। এক বিবৃতিতে তিনটি সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। সুপরিশগুলো হচ্ছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা, হতাহতদের পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন এবং এ ঘটনায় যেসব মিথ্যা মামলা করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বিষয়টি পুনরায় সামনে আসে। চলতি বছরের ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
কী ঘটেছিল ৫ মে
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সে দিন ভোর ৫টায় ফজরের নামাজের পরই ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে নেন। ঢাকার উত্তরে গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী এবং দক্ষিণে সায়েদাবাদের কাছে কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ তৈরি করেন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারা দেশ থেকে আসা বিভিন্ন কওমি মাদরাসার হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। এরই মধ্যে সংগঠনটির নেতৃত্ব ঢাকায় প্রবেশ করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। শাপলা চত্বরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনুমতির জন্য পুলিশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। ৫ মে সকালে দফায় দফায় এই অলোচনা চলে। অনুমতি মেলার আগেই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকটি মিছিল ঢুকে পড়ে ঢাকা নগরীতে।
মিছিলগুলো শাপলা চত্বরে যাওয়ার সময় সংঘর্ষ শুরু হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে এবং পল্টন এলাকায়। সে সময় পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত শাপলা চত্বরে এসে শুধু মোনাজাত করেই কর্মসূচি শেষ করার শর্তে পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও পল্টন এলাকায় সহিংসতা চলে সন্ধ্যার পরও। সেখানে হেফাজতের মিছিলে আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী হামলা করেছিল বলে অভিযোগ করে আসছে সংগঠনটি।
৫ মে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার সব প্রবেশমুখ থেকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা গিয়ে অবস্থান নেন শাপলা চত্বরে। কিন্তু পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের চারপাশের রাস্তায় বিভিন্ন ভবনে অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ-সহিংসতা চলতে থাকে। পুলিশও দফায় দফায় গুলি চালায়। রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল গোটা ওই এলাকা। দিনের এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহত হন।
সন্ধ্যায় শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাদের বক্তব্যে সেখানে অবস্থান করার ঘোষণা আসতে থাকে। সন্ধ্যার পর রাজনৈতিক অঙ্গনেও হেফাজতের এই অবস্থান ঘিরে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়। সে দিন জামায়াতে ইসলামীও কৌশলে সক্রিয় ছিল।
অন্যদিকে পরিস্থিতি সামলাতে আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় আলোচনা করছিলেন।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে লালবাগ মাদরাসা থেকে নিয়ে শাপলা চত্বরের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু শাপলা চত্বরের দিকে কিছুটা পথ এসে অসুস্থ এবং নিরাপত্তার অভাবের কথা বলে শাহ আহমদ শফি ফিরে যান। তিনি শাপলা চত্বরে আর আসেননি। রাতে অবশ্য জমায়েতও অনেকটা কমে গিয়েছিল।
সেই রাতে কী হয়েছিল
সাংবাদিকরা বলেছেন, এক যুগ আগে ৫ মে শাপলা চত্বরের মঞ্চে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বক্তব্য চলার সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ায় ওই এলাকা ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে যায়। অন্যদিকে অবস্থানকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির শত শত সদস্য পল্টনের তোপখানা মোড়, ফকিরাপুল ও দিলকুশা এলাকায় প্রস্তুত থাকতে দেখা যায়। অবস্থানকারীদের সরে পড়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কমলাপুর স্টেশন যাওয়ার রাস্তা এবং বঙ্গভবনের দিকের রাস্তা খোলা রাখা হয়েছিল। এই চিত্র ছিল ২০১৩ সালের ৫ মে রাত সোয়া ১টায়। নটর ডেম কলেজ থেকে ফকিরা পুলসহ আশপাশে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
তোপখানা মোড়ে দেখা যায়, রাত দেড়টার দিকে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা এগোনোর চেষ্টা করেন। তারা প্রথমে হাতমাইক ব্যবহার করে অবস্থানকারীদের সরে যেতে বলেন। কিন্তু মঞ্চ থেকে তখনও আসতে থাকে উত্তেজনাকর বক্তব্য। ঘণ্টাখানেক এভাবে চলে।
এরপর মূল অভিযান শুরু রাত পৌনে ৩টায় । বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ- তিন বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি আর কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকেন। থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করা হয়। শত শত ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ এবং অন্ধকার এলাকায় এসবের আলোর ঝলকানি মুহূর্তেই ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। ১০ মিনিট ধরে চলে এ পরিস্থিতি। এরই মধ্যে এক পর্যায়ে মঞ্চের মাইক বন্ধ হয়ে যায়। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে এগোতে শুরু করেন শাপলা চত্বরের দিকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তোপখানা মোড় থেকে এগোনো শুরু করার পর ১০ মিনিটেই পৌঁছে যান শাপলা চত্বরে। ট্রাকের ওপর ভ্রাম্যমাণ মঞ্চও খালি হয়ে যায় মুহূর্তেই। তখন তিন দিক থেকে আসা পুলিশ, র্যাব, বিজিবির দখলে শাপলা চত্বর। সেখানে মঞ্চের পাশে একটি ভ্যানের ওপর কাফনের কাপড় এবং পলিথিন দিয়ে মোড়ানো চারটি মরদেহ ছিল। এগুলো দিনের সংঘর্ষে নিহতদের মরদেহ বলে পুলিশ দাবি করে।
ভোর ৪টায়ও থেমে থেমে ফাঁকা গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
অভিযানের সময় হেফাজতের শত শত কর্মী-সমর্থক মতিঝিল এলাকায় সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুলিশ পুরো এলাকার দখল নেওয়ার পর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়াদের বের করে এনে ওই এলাকা ছেড়ে যেতে সহায়তা করে। হেফাজতের শত শত কর্মী-সমর্থক মাথার ওপর দুই হাত তুলে লাইন ধরে পুলিশের কর্ডনের মধ্য দিয়ে ওই এলাকায় বিভিন্ন ভবন থেকে বেরিয়ে যান। তাদের বেশির ভাগ ছিল মাদরাসার ছাত্র ও কিশোর। তাদের চোখে-মুখে ছিল অজানা আতঙ্ক, ভয়।
সেই রাতে তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। তারা জানান, অনেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মাদরাসা থেকে এসেছিলেন। রাজধানী ঢাকার রাস্তা তাদের অচেনা। কীভাবে ফিরে যাবেন, সেই ধারণাও তাদের ছিল না। যদিও পুলিশ তাদের বঙ্গভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে এবং কমলাপুর রেলস্টেশনের দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছিল। তবে ভোর ৪টার সময়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের থেমে থেমে ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তারা তল্লাশি চালান আশপাশের ভবনগুলোতে।
এভাবে রাতে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির অভিযানে হেফাজতের অবস্থান ভেঙে দিয়ে খালি করা হয় শাপলা চত্বর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দখলে নেওয়ার পর ৬ মে ভোর ৫টায় পুরো মতিঝিল এলাকায় আগের দিনের সহিংস বিক্ষোভের অনেক চিহ্নই ছড়িয়েছিল।
২০১৩ সালের ৫ মের পর হেফাজতের নেতাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের নেতারা সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন। তারা এই সংগঠনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। তবে পরে হেফাজতের নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠেছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদরাসার ‘শোকরানা মাহফিলে’ হেফাজতের তৎকালীন আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেওয়া হয়।
এক যুগ পর গত শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল মহাসমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। সমাবেশে দুই মাসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করেছিল হেফাজতে ইসলাম। ২০১১ সালে নারীনীতি প্রণয়নের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছিল। তবে নারীনীতির বিরোধিতা করাসহ ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মের কর্মসূচি ঘিরেই আলোচনায় আসে হেফাজত।
ঘটনার ১১ বছর পর মামলা
শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে গত বছরের ১৮ আগস্ট ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে মামলা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) মো. জাকী-আল-ফারাবীর আদালতে করা এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মতিঝিল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত।
এ মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, মতিঝিল থানার সাবেক ওসি ওমর ফারুক প্রমুখ।
এর পরের মাসেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের পক্ষে অভিযোগ করা হয়। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর হেফাজতে ইসলামের নেতা জুনায়েদ আল হাবিব ও মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষে আজিজুল হক ইসলামাবাদী গত বছরের ২৬ নভেম্বর এ অভিযোগ করেন।