* ১৭ হাজার শিশু হত্যা, অনাথ ৩৯ হাজার
* বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের ডাক তিন সংগঠনের
বাংলাধ্বনি নিউজ ডেস্ক, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে আরও ৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনী অবরুদ্ধ উপত্যকায় হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬২ জন। এর মধ্যে রোববার ভোর থেকে চালানো হামলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ ফিলিস্তিনি। এদিকে গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউ ইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন ও ডক্টর্স অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড এবং ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস নামে একটি গ্রুপ। খবর আল-জাজিরার।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত ১২ ঘণ্টায় দখলদাররা খান ইউনিস এলাকা লক্ষ্য করে সবচেয়ে বেশি হামলা চালিয়েছে। সেখানে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছেন। ইসরাইলি সেনারা খান ইউনিসের কয়েকটি আবাসিক ভবন ও অস্থায়ী তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে। এতে অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। যারা সেখান থেকেই বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপে মানুষ আটকে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অপরদিকে সবমিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলের হামলায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৬৯৫ জনে। এছাড়া আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৫,৩৩৮ জনে।
এছাড়াও গাজার স্বাস্থ্য সেবা খাত বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এত মানুষ আহত হয়েছেন যে হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে। এছাড়া সাধারণ মানুষকে যে চিকিৎসা দেওয়া হবে সেটির সুযোগ নেই। কারণ চিকিৎসা সরঞ্জামেরই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে ফের হামলা শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ শিশু নিহত হচ্ছে। গাজার ১০ লাখেরও বেশি শিশু এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পাচ্ছে না বলেও সতর্ক করেছে ইউনিসেফ।
এদিকে গাজায় আগ্রাসনের সময় ২৩ মার্চ ১৫ জন জরুরি চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহতে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল আইডিএফ। হত্যার শিকার রেফাত রাদওয়ানের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশের পর বিষয়টি সামনে আসে। ত্রাণবাহী একটি দল নিহত চিকিৎসাকর্মীদের মরদেহগুলো পরে খুঁজে পেয়েছিল। গাজায় ১৫ জন চিকিৎসা ও ত্রাণ কর্মীর হত্যাকাণ্ডকে ‘নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধাপরাধ’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক প্রধান এবং মেডিয়েশন গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মার্টিন গ্রিফিথস। রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ : গাজায় চলমান ইসরাইলি গণহত্যা ও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাকস্বাধীনতার ওপর দমনপীড়নের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউজের সামনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনিদের অধিকারে সমর্থনকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাছাড়া ইসরাইলকে মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাজায় ১৭ হাজার শিশু হত্যা, অনাথ ৩৯ হাজার : গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি আগ্রাসনে ১৭ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। আর ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে এতিম হয়েছে ৩৯ হাজারের বেশি শিশু। ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। আরেক নতুন প্রতিবেদনে জানা গেছে, গাজায় ৩৯ হাজারের বেশি শিশু অনাথ হয়েছে। অর্থাৎ, তারা তাদের এক বা উভয় পিতামাতাকে হারিয়েছে। ইসরাইলি হামলায় উপত্যকায় মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ৫২৩-এ দাঁড়িয়েছে এবং ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৭৬ জন আহত হয়েছে।
গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক : গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউ ইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টর্স অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড। এর অংশ হিসাবে আজ সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় কর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন।
হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছে, গাজায় গণহত্যা বন্ধে আমরা বৈশ্বিক ধর্মঘটের আহ্বান জানাচ্ছি। এই উদ্দেশ্য সফল করতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। এতে বলা হয়, বিশ্ব এখন নবজাতক ও মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনেক সচেতন। অথচ গাজাবাসী জীবন ধারণের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। মার্কিন বোমার আঘাতে হাসপাতাল গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। অগণিত মা ও শিশু সাধারণ যত্নের অভাবে এবং বিস্ফোরণের আঘাতে মৃত্যুবরণ করছে।
ধর্মঘটে অংশগ্রহণের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়ে বিবৃতির শেষে বলা হয়, গাজার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে সবাই রাস্তায় নেমে আসুন। জায়নবাদীদের যুদ্ধাপরাধের অবসান ঘটান। মার্কিন সহযোগিতা বন্ধ করুন। আর সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনুন। পুরো একটা জনগোষ্ঠী যখন অনাহারে থেকে বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, আমরা তখন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। রাস্তায় নামুন, আওয়াজ তুলুন, প্রতিবাদ করুন!
এছাড়া গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ। রোববার ওয়াফা নিউজের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। গাজার ভয়াবহ দৃশ্য ও নিহতের সংখ্যা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে এই ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে যুদ্ধের অবসানের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা একত্রিত করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গাজায় ইসরাইলি অপরাধ ও ফিলিস্তিনি অধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কা/ত/মা