তিন দফা দাবিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচি থেকে আটক পাঁচ শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে প্রায় সাড়ে ২১ ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানা-পুলিশ। পরে তারা আন্দোলনে অংশ নেন।
ওই পাঁচ শিক্ষক হলেন— প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়নের সমন্বয় জয়পুরহাটের সহকারী শিক্ষক মু. মাহবুবুর রহমান, পটুয়াখালীর সহকারি শিক্ষক লিটন মিয়া, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের সহকারী শিক্ষক আব্দুল কাদের, ধামরাইয়ের সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম এবং কুমিল্লার সহকারী শিক্ষক মো. সোহেল।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আটকের পর মুক্তি পাওয়া নেতারা আজ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
শিক্ষকদের এই আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তৃতীয় ধাপে সুপারিশ পাওয়া সহকারী শিক্ষক মো. মহিব উল্লাহ বাংলা ধ্বনিকে বলেন, আহত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিক্ষক নেতা বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি হুইল চেয়ারে বসেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। মুক্তি পাওয়ার পর আটক শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগ দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা জানান, দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের কলম বিসর্জন প্রতিবাদের সময় শনিবার এই পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের শাহবাগ থানায় রাখা হয়। তারা রাতে অনশন শুরু করেন।
শনিবার রাতে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বাংলা ধ্বনিকে জানিয়েছেলেন, নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তারা অনশন শুরু করেন।
শিক্ষকদের এই আন্দোলন কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে তৃতীয় ধাপে সুপারিশ পাওয়া সহকারী শিক্ষক মো. মহিব বুল্লাহ বাংলা ধ্বনিকে বলেন, শনিবারের পুলিশি নির্যাতনে ১০৯ জন শিক্ষক আহত হন। পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। আজ তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিক্ষক নেতা খায়রুন নাহার লিপি হুইল চেয়ারে বসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে শনিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। শিক্ষক জোট ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের পূর্বনির্ধারিত অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাসেম-শাহীন) সভাপতি প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ, দশম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয়ক মু.মাহবুবুর রহমান এবং অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ আনোয়ার উল্যা।
শনিবার দুপুরে শহীদ মিনার থেকে শাহবাগে গিয়ে শিক্ষকরা কলম বিসর্জন কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের লাঠিচার্জ, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড হামলার শিকার হন। আহত হন ১০৯ জন শিক্ষক। পুলিশ আকট করেন পাঁচ জন শিক্ষককে। রাতে মোমবাতি প্রজ্জ্বল করে শহীদ মিনারে এর প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। এর আগে দুপুরে পুলিশি নির্যাতন ও শিক্ষক আটকের ঘটনায় সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মবিরতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদও শুরু হয় রবিবার থেকে। আজ শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষকরা।
কা/ত/মা