সোমবার, সন্ধ্যা ৬:১৪
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি,

সংগীত এবং ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষকের কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

প্রাথমিক শিক্ষায় ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে এবং সংগীত ও ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষকের কোটা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে মূল্যবোধ আন্দোলন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন পেশাজীবী অংশ নেন।

সাবেক সচিব নূরুল আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আন্দোলনের আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ সাদাত, খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা মাহবুবুর রহমান, দাওয়াতুল ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষক মুফতী মুজীবুর রহমান কাসেমী এবং সমন্বয়ক মুহসিনুদ্দীন মাহমূদ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার প্রাথমিক স্তরে ইসলাম ধর্ম শিক্ষকের দাবি উপেক্ষা করে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বিতর্কিতভাবে ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামীদের শিক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষার ভয়াবহ মান সংকটের মধ্যেও মৌলিক বিষয় বাদ দিয়ে সংগীত ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটার শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।”

ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ সাদাত বলেন, “বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম যোগ্যতাও অর্জন করতে পারছে না। অথচ এই অবস্থায় সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইসলামের বিরোধী এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

মানববন্ধনে বক্তারা চার দফা দাবি জানান:

১. প্রাথমিক স্তরে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।

২. ইসলাম ধর্মের জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষক নিয়োগ।

৩. সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে মৌলিক বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ।

৪. সরকারি নিয়োগ থেকে বিতর্কিত তৃতীয় লিঙ্গ কোটা বাতিল।

মূল্যবোধ আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহসিনুদ্দীন মাহমূদ বলেন, ‘৬ অক্টোবর ২০২৪ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম মিলন দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়। বিগত একবছরেও সরকার এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অথচ সাম্প্রতিক গেজেট অনুযায়ী সরকারি নিয়োগে ১% কোটা শারীরিক প্রতিবন্ধী ও ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ প্রার্থী তথা সমকামীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, মৌলিক শিক্ষায় যখন ভয়াবহ ঘাটতি, তখন সংগীতের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া শিক্ষানীতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক জাতীয় স্বার্থবিরোধী। উল্লেখ্য, ইসলামে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ৯২% মুসলিমের ট্যাক্সের টাকায় তাদের সন্তানদের বাধ্যতামূলকভাবে সংগীতের নামে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শেখানো রাষ্ট্রের উগ্র ইসলামবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িকতারই বহিঃপ্রকাশ।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ৯২% মুসলিম জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক স্তরে ইসলাম শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষক নেই। অথচ সংগীতের মতো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ স্পষ্টতই জাতীয় চাহিদা ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তৃতীয় লিঙ্গ কোটার মাধ্যমে, যার আইনগত সংজ্ঞাও এখনো অস্পষ্ট, শিক্ষাব্যবস্থায় সমকামিতার মতো সামাজ ও ঈমানবিধ্বংসী এজেন্ডার অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দ্বন্দ্ব ও বিভাজন তৈরি করবে।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, আলেম সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত পেশাজীবীদের হাতে ‘শেখার কথা সালাত-সিয়াম, শেখায় তবলা-হারমোনিয়াম’, ‘আসল শিক্ষার নাই ভিত, প্রাথমিকে কেন সংগীত?’, ‘শিক্ষক যখন সমকামী, সমাজ তখন অধঃগামী’, ‘হিজড়া হওয়া আসমানী, তৃতীয় লিঙ্গ শয়তানী’ প্রভৃতি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় লিঙ্গ বা সমকামী শিক্ষক আর গানের টিচার নিয়োগের ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ এবং সুযোগ্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে মানববন্ধনটি সমাপ্ত হয়।

কা/ত/মা

Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *