বুধবার, দুপুর ১২:৪৯
৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি,

আটক বা হত্যার নির্দেশ র‍্যাব পেতো প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে: সাবেক আইজির জবানবন্দি

জুলাই হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিচ্ছেন রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি জানিয়েছেন, ২০১৮-এর নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালটবাক্সে ভরে রাখার পরামর্শ দেন তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী। যেসব পুলিশেরা এই দায়িত্ব পালন করে তাদের বিপিএম, পিপিএম রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া হয়।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন তিনি।

জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পুলিশের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়। গোপালগঞ্জ বেল্টের পুলিশ অফিসাররা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে থাকে পুলিশ। সিনিয়র অফিসারদের পক্ষে এগুলো কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি ২০২৩ সালে তার অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও গ্রুপিং এড়াতে আইজি থাকার মেয়াদকাল বৃদ্ধি করে সরকার বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, র‍্যাব কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আসতো। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীর মাধ্যমে এ নির্দেশনা আসতো। র‍্যাবের অফিসারদের মধ্যে আলেপ উদ্দিন ও মহিউদ্দিন ফারুকি বন্দীদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার মতো কাজে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন।

জুলাই–আগস্টের আন্দোলনের বিষয়ে সাবেক আইজি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামালের বাসায় ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাত ৮–৯টার দিকে কোর কমিটির মিটিং হতো। কোর কমিটির সদস্য হিসেবে সেই মিটিংয়ে তাকেও উপস্থিত থাকতে হতো বলে জানান তিনি।

জানান, মিটিংয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত সচিব টিপু সুলতান ও রেজা মোস্তফা, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, র‍্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার জিডি মেজর জেনারেল এ.কে.এম. আমিনুল হক, এনটিএমসির ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও ডিজিএফআই প্রধান উপস্থিত থাকতেন।

মিটিংয়ে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে জানান, আন্দোলন দমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতো এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ শেয়ার করতেন। কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিএফআই ও ডিবি প্রধান হারুনকে আটক করার দায়িত্ব দেয়া হয়।

পরে তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয় এবং সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন ও চাপ প্রয়োগ করা হয়। সেখানে তাদের আত্মীয়-স্বজনকেও নিয়ে আসা হয়। এমনকি সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়।

কোর কমিটির মিটিংয়ে সমন্বয়কদের আটকের বিষয়ে তিনি বিরোধিতা করেছিলেন বলেন দাবি করেন সাবেক এই আইজি। জানান, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে তাদের আটক করা হয়।

ডিবি প্রধানের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামালের গভীর সম্পর্ক ছিল। সেজন্য আসাদুজ্জমান খান কামাল ডিবি হারুনকে ‘জ্বিন’ নামে ডাকতেন। তাকে খুব কর্মতৎপর এবং সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিকভাবে খুব কার্যকর মনে করতেন।

কা/ত/মা

Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *