রবিবার, দুপুর ১২:৫০
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি,

জিন তাড়ানোর জন্য ডেকে আনা কবিরাজের হাতে মা-মেয়ে খুন, রোমহর্ষক বর্ণনা

কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমকে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। জিন তাড়ানোর জন্য ডেকে আনা কবিরাজ মোবারক হোসেনের হাতেই খুন হন দুজন। সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে দেখে ফেলায় মাকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয় এবং পরে সুমাইয়াকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে মোবারক হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত মোবারক হোসেন নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি নগরীর বাবুস সালাম জামে মসজিদের খাদেম। পাশাপাশি কবিরাজি ব্যবসা করেন। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান।

পুলিশ সুপার জানান, নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিনের মা তাহমিনা বেগম নগরীর বাবুস সালাম জামে মসজিদের খতিব ইলিয়াস হুজুরের কাছে মাঝেমধ্যে ঝাড়ফুঁকের জন্য যেতেন। সেখানে পরিচয় হয় ওই মসজিদের খাদেম মোবারকের সঙ্গে। সেই সূত্র ধরে গত একমাস ধরে তাহমিনা বেগমদের বাসায় যাতায়াত ছিল মোবারকের। গত ৭ সেপ্টেম্বর তাহমিনা বেগম তার মেয়ের জিন তাড়ানোর জন্য কবিরাজ মোবারককে বাসায় ডাকেন। এসময় মেয়ে সুমাইয়া আফরিনের কক্ষে জিন তাড়ানোর জন্য যান মোবারক। একপর্যায়ে কবিরাজ মোবারক সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে তাহমিনা বেগম তার মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষায় এগিয়ে যান। এসময় সুমাইয়াকে তার কক্ষে আটকে রেখে তাহমিনাকে তার কক্ষে নিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন কবিরাজ মোবারক। পরে সুমাইয়া আফরিনের কক্ষে গিয়ে তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তাদের বাসায় থাকা চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার পর পুলিশের একাধিক ইউনিট ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে। ঘটনাস্থলের পাশের একটি স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে মূলহোতা মোবারককে শনাক্ত করা হয়। ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া কবিরাজ মোবারক সোমবার রাতে ট্রেনে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। এসময় পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে নগরীর বাঁগিচাগাও এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ড দুটি একজনই সংগঠিত করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। আর কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় র‌্যাব কর্তৃক আটক আব্দুর রবের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই বলেও তিনি জানান।

প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইফুল মালিক, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম, জেলা ডিবির ওসি মো. আব্দুল্লাহ, কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমানসহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাগণ।

এর আগে সোমবার ভোরে কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম এবং তার মেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন। এ ঘটনায় নিহত তাহমিনার বড় ছেলে তাজুল ইসলাম ফয়সাল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে ঘাতককে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও ঘাতক গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।

কা/ত/মা

Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *