সোমবার, দুপুর ১:১৩
৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি,

মাকে হারানোর পর বুঝেছি, ভালোবাসারও মৃত্যু হয়: মুফতি আহসান শরিফ

|| মুফতি আহসান শরিফ ||

মা নেই আজ পূর্ণ এক বছর হলো। মৃত্যুর পর তাঁকে আর একবারও দেখা হয়নি। হঠাৎই গতরাতে যেন তিনি নিজেই এলেন।

স্বপ্নে দেখি, আমাদের বাড়ির পুকুরে মা অজু করছেন। ঘাটের একপাশে, মুখভরা নূরের আলো। আমি তাকিয়ে আছি, তাকিয়েই থাকি। হঠাৎ মা ফিরে তাকালেন— উপরে ওঠার জন্য হাত বাড়ালেন। আমি ভালোবাসায় তাঁর হাত ধরলাম। অনুভব করলাম মায়ের সেই চিরচেনা মমতা। ঠিক তখনই ঘুম ভেঙে গেল। রাত চারটা। বসে মায়ের জন্য ঈসালে সওয়াব করলাম। মনটা প্রশান্ত হয়ে উঠলো। মনে হলো— এটা শুধু স্বপ্ন নয়, সত্যিই মাকে দেখেছি।

কিন্তু মা, তুমি কিছুই বললে না কেন? আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারতে না? তোমাকে মাটিতে শুইয়ে দেওয়ার মুহূর্তটা আজও বুকের ভেতর কাঁটার মতো বিঁধে আছে। জীবনে কখনও তোমাকে খাট ছাড়া শুতে দেখিনি। নিজ হাতে মাটিতে শুইয়ে দিতে গিয়ে বুঝেছিলাম— হারানোর অর্থ কতটা গভীর! মা, তোমার মৃত্যুর আগে তুমি গ্রামের বাড়িতে ছিলে। আর আমি শহরে। দূর থেকে শুধু জানতে চাইতাম— “মা, কেমন আছো? ওষুধ আছে তো? কিছু লাগবে?” তুমি ক্লান্ত কণ্ঠে ছোট ছোট উত্তর দিতে। সেই সামান্য কথাগুলিই ছিল আমার প্রশান্তির উৎস। আজও যখন মোবাইল হাতে নিই, বুক কেঁপে ওঠে। আনমনে ভাবি, একবার বলি— “কেমন আছো, মা?” কিন্তু পরক্ষণেই বুঝি— কল রিসিভ করার মতো কেউ আর নেই। তোমার একমাত্র মেয়ে, আমাদের প্রিয় বোনটি তোমার আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে। তোমাদের দুজনকেই হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। বোন ছিল তোমার নিবেদিত সেবক, আমারও আশ্রয়। তোমার অসুস্থতার সময় সে ছিল তোমার প্রাণের মানুষ। আজ তোমরা দুজনই নেই, অথচ প্রতিটি নিঃশ্বাসে তোমাদেরই স্মৃতি ভাসে। শৈশবে আমি কখনও তোমার কাছ থেকে আলাদা থাকিনি। তুমি প্রতিদিন আমার খাবার সাজিয়ে দিতে, কাপড় ধুয়ে দিতে, অসুখে পাশে বসতে। আমি ভাবতাম, সব মায়েরাই এমন হয়। পরে বুঝেছি— না, সব মা এমন হয় না। তুমি ছিলে আলাদা, তুমি অনন্য, তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ। আজও চোখে ভেসে ওঠে তোমার সেই মুখ— শান্ত, স্নিগ্ধ, আর নূরময়। তোমার কণ্ঠ, তোমার দোয়া, তোমার হাতের ছোঁয়া সবকিছু যেন হৃদয়ের এক অবিনশ্বর অংশ হয়ে আছে। দুয়া করি, আল্লাহ সর্বদা ওপারে ভালো রাখুক তোমাকে।

লেখক- আলেম, পাঠক, সংগঠক

প্রিন্সিপাল, জামিয়াতুল বালাগ ঢাকা ও রওজাতুল বানাত ঢাকা।

কা/ত/মা

Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *