সোমবার, সকাল ৯:৩৪
১লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি,

এরশাদ থেকে জি এম কাদের: ভারতের হাসি, বাংলাদেশের কান্না

|| আবু দানিয়াল ||

১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে এরশাদ ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ছিলেন। সেখানেই ভারত তাকে নিজের বিশ্বস্ত এজেন্ট হিসেবে তৈরি করে। ১৯৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর RAW–এর ছদ্মবেশী এজেন্ট এরশাদ বাংলাদেশে ফিরে এসে জিয়াউর রহমানের আনুকূল্য লাভে সফল হয়। ১৯৭১ সালে পুরোটা সময় পাকিস্তানে থাকার কারণে কেউ কল্পনাও করেনি—এরশাদ ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এজেন্ট ছিল।

পরে জেনারেল মঞ্জুরের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর এরশাদ একে একে সংশ্লিষ্টদের সরিয়ে নিজেকে সাধু প্রমাণে সক্ষম হয়। নিজেকে আরও নিরাপদ করতে জিয়াউর রহমান হত্যার পর সরাসরি ক্ষমতা দখল না করে প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তারের পাশে দাঁড়ায়। কারণ, সে সময় সরাসরি আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করা ভারতের জন্য সহজ ছিল না। তাই ভারত এরশাদকে ক্ষমতায় এনে টানা আট বছর বাংলাদেশে নিজের কৌশল বাস্তবায়ন করতে থাকে।

এরশাদের শাসনামল ছিল বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়কে দুর্নীতিগ্রস্ত করার স্বর্ণযুগ। যুবসমাজকে ধ্বংস করতে সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়—ফেন্সিডিল ও হেরোইন ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশে, যেখানে এরশাদ পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে বড় বড় রংবাজদের কমিশনার বানায়। শহরে তখন অবাধে অস্ত্র চলাচল করত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে নেশার সামগ্রী ও অস্ত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এরশাদের লাগামহীন দুর্নীতি ও নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের প্রমাণ RAW–এর হাতে ছিল। সেই দুর্বলতাকে হাতিয়ার করেই RAW মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এরশাদ ও জাপাকে ব্ল্যাকমেইল করে গেছে। আজ এরশাদ নেই, কিন্তু অভিশপ্ত জাপা এখনো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় ও RAW–এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে।

এরশাদ ও জাপার আনুকূল্যে বেদাতী গডফাদার আটরশি, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী এদেশে ঈমান বিধ্বংসী খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়। এদিকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছিলেন এদেশে মোসাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী এজেন্ট—এটা ছাত্রজীবন থেকেই আমরা জানতাম।

এরশাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক চমকপ্রদ কাহিনি আজও অজানা নয়। যেমন, লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী এরশাদের আমলে এমপি ছিলেন। কাদের সিদ্দিকী ১৯৭৫ সালের আগস্ট পরবর্তী সময়ে এদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ গঠন করে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। ১৯৯৩ সালে মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোডের এক বাসায় ছাত্রাবস্থায় লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয় একাধিকবার। তখন তার কাছে ছিল একটি টয়োটা ক্রাউন—যা সে সময়ের মার্সিডিজের সমতুল্য, সবচেয়ে দামী গাড়িগুলোর একটি।

৭১ মঞ্চ থেকে জাপা অফিস—সবখানেই একই সূত্রের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। গতকাল RAW–এর এজেন্ট জি এম কাদেরের মুখের হাসি যেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিজয়ের হাসি, ভারতের বিজয়ের হাসি।

কা/ত/মা

Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *