রাজধানীর উত্তরা এলাকায় এক ব্যতিক্রমী ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুমার বয়ানের সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রেরিত একটি ‘হুঁশিয়ারিমূলক চিঠি’ মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়েই প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলেছেন খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী।
ঘটনাটি ঘটে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বায়তুন নূর জামে মসজিদে। ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জুমার বয়ানের মাঝপথে খতিব বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল আমাকে নোটিশ দিয়েছে। আপনারা কি সবাই একমত?”
এ কথা শুনে উপস্থিত মুসল্লিরা একসঙ্গে উচ্চ স্বরে “না” বলে প্রতিবাদ জানান। তখন খতিব বলেন, “কে কে একমত, হাত তুলুন দেখি?” কেউ হাত না তুললে তিনি ঘোষণা দেন— “এই চিঠি অবাঞ্ছিত। মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের পক্ষ থেকে একে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।”
এরপরই তিনি চিঠিটি উঁচু করে ধরে প্রকাশ্যে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেন এবং দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “খবরদার! মসজিদে এরকম আস্ফালন দেখাবেন না।”
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খতিব কাসেমীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করছেন বহু মানুষ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাছিব আর রহমান লিখেছেন— “জামায়াতের দলীয় সন্ত্রাসের আদলে দেওয়া হুমকির জবাব দিয়েছেন মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে। মুসল্লিরা ধর্মীয় সন্ত্রাসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন— এটি এক অনন্য দৃশ্য।”
তিনি আরও বলেন, “জামায়াতের ধর্মীয় মোড়লগিরির সুযোগ কওমি আলেমরা যত কম দেবে, ইসলাম তত বেশি সুরক্ষিত থাকবে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক কে. এম. তাহমীদ হাসান বলেন, “কিছু ইসলামী দল এখন ধর্মীয় পরিসর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। মসজিদের মিম্বারে ইসলামের আলোচনা করাও যদি অপরাধ হয়ে যায়, সেটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা।”
তিনি এ অবস্থাকে ‘নব্য ফ্যাসিবাদী আচরণ’ বলে উল্লেখ করেন।
প্রবাসী বিশ্লেষক মাহফুজ চৌধুরী লিখেছেন, “একজন খতিব জুমায় রোজা ও পূজা প্রসঙ্গ টানায় জামায়াত তাকে হুমকি দিয়েছে! অথচ আওয়ামী লীগ যখন বারবার দলীয় ব্যানারে মসজিদ ব্যবহার করেছে, তখন কেউ কিছু বলেনি।”
তার ভাষায়, “এটি নিছক হুমকি নয়, এটি ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির চর্চা— যা শুরু হচ্ছে ধর্মীয় পরিসর থেকে।”
নামাজ আদায়কারী মুসল্লিরা জানান— “খতিব সাহেব সঠিক কাজ করেছেন। মসজিদকে রাজনীতির মঞ্চ বানানোর চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।”
স্থানীয়দের দাবি, মসজিদে ধর্মীয় বক্তব্যে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করা কোনো দলকেই মেনে নেওয়া হবে না।
এই ঘটনাকে ঘিরে ধর্মীয় পরিসরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নটি আবারও সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মসজিদ কেবল ইবাদতের স্থান নয়— এটি সমাজের নৈতিক কেন্দ্র। সেখানে রাজনৈতিক দলীয় হুমকি আসা গণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী।
কী ছিল জামায়াতের সেই চিঠিতে?
জামায়াতের উত্তরা পশ্চিম থানা শাখার দপ্তর সম্পাদক জি. এম. আসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি তারিখ ছিল ১৬ অক্টোবর। এতে অভিযোগ করা হয়— “গত ১০ অক্টোবরের জুমার খুতবায় খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী জামায়াতের নাম উল্লেখ করে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।”
চিঠিতে সতর্ক করা হয়— ভবিষ্যতে এমন বক্তব্য দিলে “যে কোনো পরিণতির দায়ভার খতিব ও মসজিদ কমিটিকে নিতে হবে।”
চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয় স্থানীয় আর্মি ক্যাম্প, ডিএমপি উত্তরা বিভাগ ও থানায়ও।
কা/ত/মা