সোমবার, দুপুর ১:১৪
৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি,

আল-আমিন সংস্থার তাফসীর মাহফিলে সরকারের প্রতি ১০ দফা দাবি

ছবি: ইখলাস আল ফাহীম, আল আমিন সংস্থার মাহফিলের শেষ দিনের চিত্র।


বৃহত্তর চট্টগ্রামের সেবামূলক সংগঠন আল-আমিন সংস্থা আয়োজিত ২১তম তিনদিনব্যাপী তাফসীরুল কুরআন মাহফিল থেকে সরকারের প্রতি ১০ দফা দাবি জানানো হয়েছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) মাহফিলস্থ জনসমুদ্র থেকে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ধর্মীয় মর্যাদা, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় এসব দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা, পবিত্র কুরআন ও মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবমাননা প্রতিরোধে ব্লাসফেমি আইন পাস, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মুসলমানদের অধিকার নিশ্চিত করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মশিক্ষক নিয়োগ, কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন এবং বিদেশি আগ্রাসন ও প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখা।

সংস্থার নেতারা বলেন, “আল-আমিন সংস্থা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তবে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে আমরা সবসময় সরব। আগামীর নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে, এবং যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন ইসলামবিরোধী অবস্থান না নেয় ও আলেম সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নিম্নলিখিত ১০ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে—

১. আন্তর্জাতিক উদাহরণ অনুসল্লেষে (সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি) বাংলাদেশে ইসকনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

২. পবিত্র কোরআন অবমাননা, মহানবী (সা.)-এর কটূক্তি ও ইসলামী বিধিবিধানের অবমাননা রোধে অন্যান্য দেশগুলোর ন্যায় ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করা।

৩. জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ত্যাগীদের রক্তের স্মৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠিত ঘোষণাপত্রে ইসলামের অধিকার ও মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও ৯০% মুসলিম স্বার্থসংক্রান্ত বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে তা কার্যনির্বাহী করা।

৪. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার নিশ্চয়তার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রত্যেকটিতে একজন ধর্মশিক্ষক নিযুক্ত করা।

৫. আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু দেশের মতো কথিত আহমদিয়া মুসলিম জামাত (কাদিয়ানী)কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি।

৬. পশ্চিমা দেশগুলোর উপর নির্ভর কমিয়ে তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে কূটনীতি, সামরিক, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষা সম্পর্ক জোরদার করা।

৭. হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী, আলেম-ওলামা ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদান।

৮. পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত আঁটসাঁট সূচনার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসহ কঠোর প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ; প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রত্যাহারকৃত সেনা ঘাঁটিগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

৯. বাংলাদেশের সার্বভৌমত্তা ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা; সংশ্লিষ্ট শত্রুপ্রবণ স্থানের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা।

১০. আল-আমিন সংস্থা রাজনৈতিক নয়—তবু মুসলমানদের ধর্মীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রতিহত সচেতনতা অব্যাহত থাকবে; ভবিষ্যৎ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, ক্ষমতাসীনরা ইসলাম ও আলেমসমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে না—এ নিশ্চয়তা প্রদানের অনুরোধ।

এছাড়াও আয়োজকবৃন্দ উল্লেখ করেছেন, উল্লিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করলে দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ধর্মীয় স্বার্থের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের প্রতি তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

কা/ত/মা

Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *