মঙ্গলবার, সকাল ৮:০৯
১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি,

ভারতে মুসলিমদের উপর ১৮৪ হামলা

জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলার পর থেকে দেশজুড়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বেড়েছে সহিংসতা, আক্রমণ, হামলা ও নির্যাতন। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৮৪টি বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ১০৬টি সহিংসতা, আক্রমণ, হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস (এপিসিআর) মানবাধিকার সংগঠনের এক রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি ‘পেহেলগামের পর ঘৃণা : সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের মানচিত্র’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এপিসিআর।

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণ, হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে। ঘৃণা ভাষণের ফলে কমপক্ষে ৩১৬ জন মুসলিম ব্যক্তিকে শারীরিক নিগৃহ ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে।

সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে যোগীর উত্তরপ্রদেশে। রাজ্যটিতে হামলা ও নির্যাতনের ৪৩টি ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র ও উত্তরাখণ্ড। দু’টি রাজ্যেই ২৪টি করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ২০টি সহিংসতার ঘটনা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। রাজধানী দিল্লিতে ঘটেছে ৬টি ঘটনা। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গে ৯টি, হরিয়ানায় ৯টি, বিহারে ৬টি, হিমাচল প্রদেশে ৬টি, পঞ্জাবে ৪টি, রাজস্থানে ৩টি, তেলেঙ্গানায় ৩টি, ওড়িশায় ১টি, আসামে ১টি, জম্মু ও কাশ্মিরে ২টি, কর্ণাটক ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ে ৬টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই রাজ্যগুলোতে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনিক কর্তাদের ভূমিকা নিয়েও।

এপিসিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশজুড়ে ৮৪টি বিদ্বেষ ও ঘৃণা ভাষণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসভা থেকে দেয়া ঘৃণা ভাষণ, রাজনৈতিক নেতাদের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এবং একশ্রেণির সংবাদ মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য। মুসলিমদের হুমকি দেয়া, বলপ্রয়োগ করে তাদের সম্পত্তি খালি করা, ব্যবসা বন্ধ করা এবং ধর্মীয় রীতি পালন না করতে ভয় দেখানোর ৬৪টি ঘটনা ঘটেছে। মুসলিমদের হয়রানি করার ৪২টি ঘটনা সামনে এসেছে। মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করে তাদের ওপর হামলার ৩৯টি ঘটনা ঘটেছে। মুসলিমদের মসজিদ, মাদরাসা ও দোকানপাট ভাঙচুরের ১৯টি ঘটনা ঘটেছে। ১৪টি হুমকি, ৭টি মৌখিক গালিগালাজের ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টে উল্লেখিত ঘটনাগুলো নিয়ে দেশে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন উঠেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক মুসলিম পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে গোটা ঘটনা রেকর্ড করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি।

উত্তরপ্রদেশের এক ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম পরিবার এপিসিআর-কে বলেছে, ‘আমার ভাই মাথায় টুপি পরে কলেজ গিয়েছিল বলে তাকে ধরে একদল যুবক ব্যাপক মারধর করে। হামলাকারীরা তাকে উগ্রবাদী বলে দাগিয়ে দেয়। এমনকি তাকে কলেজে আসতে দেখলে খুন করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।’

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের এক মুসলিম সবজি বিক্রেতাকে বারবার হেনস্থা ও হুমকির মুখে তার স্টল বন্ধ করে দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে পাকিস্তান চলে যেতে বলে।’ এসব ঘটনার জন্য কার্যত ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম পরিবারগুলো।

এপিসিআর-এর মতে, পেহেলগাম হামলা পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা নতুন মাত্রায় পৌঁছায়। একাধিক জায়গায় গুজব ও হিংসা ছড়িয়ে মুসলিমদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়েছে। পরে ওই ঘটনার জন্য তাদের নিশানা বানিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। এই সমস্ত সহিংসতার কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট করছে। এই ঘটনাগুলিকে কড়া হাতে দমন না করলে দেশ গভীর সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ঝুঁকি তৈরি করবে।

সূত্র : পুবের কলম

Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *