বুধবার, সকাল ১০:০৪
২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি,

টেস্টে কোহলির বিদায়

১৪ বছরের এক মহাকাব্যের ইতি টানলেন বিরাট কোহলি। ভারতের সাদা পোশাকের ক্রিকেটে যার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। । কোহলি সময়ের সেরা টেস্ট ব্যাটারদের একজন, যার প্রতিটা ইনিংসে ছিল ক্লাস, আগ্রাসন আর অনুপ্রেরণার ছাপ। পেছনে রেখে গেলেন অসংখ্য রেকর্ড, চিরস্মরণীয় সব মুহূর্ত আর ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন মানচিত্র। এই প্রতিবেদনে জানবো—বর্ণিল এই পথচলায় কীভাবে নিজেকে কিংবদন্তি করে তুললেন , আর কী কী উপহার দিয়ে গেলেন ভারতের টেস্ট ইতিহাসকে।
শুরুটা ২০১১ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক। এরপর সেই বছরই অস্ট্রেলিয়া সফরে নিজেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুললেন। দলে জায়গা পাওয়া তো দূরের কথা, তখনো কেউ ভাবেনি যে এই তরুণ একদিন হয়ে উঠবেন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক। কিন্তু গল্পটা বদলাতে শুরু করে অ্যাডিলেডে। সিরিজের শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিরাট কোহলি খেলেন তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। ১১৬ রানের সেই ইনিংসটা শুধুই প্রথম শতক ছিল না, বরং ছিল এক কিংবদন্তি টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বড় ঝলক।
এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিরাট কোহলি হয়ে ওঠেন ভারতীয় ক্রিকেটের মেরুদণ্ড। ব্যাট হাতে যেমন নির্ভরতা, তেমনি নেতৃত্বেও এনে দিলেন আগ্রাসন আর আত্মবিশ্বাসের নতুন সংজ্ঞা। ৬৮টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতকে, যার মধ্যে জয় এসেছে ৪০টিতে যা ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আর পুরো বিশ্ব ক্রিকেটেও তিনি আছেন সেরা চার অধিনায়কের কাতারে। গ্রায়েম স্মিথ, রিকি পন্টিং আর স্টিভ ওয়াহর পরেই তার নাম।
তবে কেবল সংখ্যাতেই কোহলির প্রভাব পুরোপুরি বোঝা যায় না। তার নেতৃত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঠজুড়ে তাঁর উপস্থিতি, আগ্রাসী শরীরী ভাষা, প্রতিপক্ষকে চোখে চোখ রেখে জবাব দেওয়া—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতের টেস্ট দলের প্রতিচ্ছবি। বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়, দলকে হার না মানার মানসিকতা শেখানো—এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে ছিলেন কোহলি।
ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। অধিনায়ক হিসেবেই করেছেন ২০টি টেস্ট সেঞ্চুরি, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গ্রায়েম স্মিথের চেয়েও কম ম্যাচে এই কীর্তি—মাত্র ৬৮টি টেস্টে। তার নেতৃত্বাধীন ম্যাচগুলোতে এসেছে ৫৮৬৪ রান, যা দলের মোট রানের ১৬.৪৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানে শুধু জো রুট রয়েছেন তার ওপরে।
ডাবল সেঞ্চুরির মঞ্চেও বিরাট কোহলি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। টেস্টে করেছেন ৭টি ডাবল সেঞ্চুরি—ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, এবং তাঁর অভিষেকের পর আর কোনো ব্যাটসম্যান এতবার ২০০-র গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তাঁর ব্যাটিং যেন ছিল স্টাইল আর ক্লাসের নিখুঁত মিশ্রণ। ভারতের টেস্ট ইতিহাসে ৯২৩০ রান করে কোহলি আছেন রানের তালিকায় চতুর্থ স্থানে। সেঞ্চুরি করেছেন ৩০টি, এটিও চতুর্থ সর্বোচ্চ। আর টানা দুটি ক্যালেন্ডার ইয়ারে ৭৫-এর বেশি গড়ে ১০০০ রান করার একমাত্র কীর্তিটি আছে কেবল তার নামের পাশে।
ধোনি যেখানে ৬০ ম্যাচে এনে দিয়েছিলেন ২৭টি জয়, কোহলি সেখানে ৬৮ ম্যাচে এনে দেন ৪০টি জয়। ২০১০ সালের পর থেকে অন্তত ৫০টি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া আর কোনো অধিনায়ক এত বেশি জয় আনতে পারেননি নিজের দেশের হয়ে।
সাদা পোশাকের ফরম্যাটে আর দেখা না গেলেও কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মনে থাকবে কোহলির আগ্রাসন, দৃঢ়তা আর টেস্ট ক্রিকেটকে ঘিরে থাকা তার নিখাদ ভালোবাসা।   টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর রেখে যাওয়া ছাপ রয়ে যাবে চিরদিন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
Facebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *